খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নাছিরপুরে খাল দখলকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। অস্ত্রশস্ত্রসহ চলছে দখল-পাল্টা দখলের মহড়া। এরই মধ্যে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মারধর করে উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাছিরপুর খালটি ইজারার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টেন্ডার দাখিল করা হলেও কোনো পক্ষকে এখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। নিয়ম ও রীতি অনুযায়ী চলতি বছর পহেলা বৈশাখের আগে টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা। তবে, নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘তালতলা গোয়ালবাথান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’র নেপথ্যে কাজ করে শাহাদাত হোসেন ডাবলু নামে স্থানীয় এক বিতর্কিত ব্যক্তি। যার বিরুদ্ধে সমিতি গঠনে অনিয়ম এবং সামাজিক ও ফৌজদারি অপরাধের অতীত রেকর্ড আমলে নিয়েছে প্রশাসন। চলছে প্রশাসনিক তদন্ত কার্যক্রম। একই সঙ্গে ফসলি জমি ও বিলবৈচিত্র্য রক্ষায় খালটি উন্মুক্ত হতে পারে- এমন আলোচনাও চলমান। ফলে, প্রত্যাশা অনুয়ায়ী নির্ধারিত সময়ে খালের বরাদ্দ না পেয়ে বেপরোয়া উঠেছে ডাবলু ও তার সহযোগীরা।
অন্যদিকে শক্তিতে দুর্বল হলেও মাঠে নেমেছে তাদের প্রতিপক্ষের লোকজন। চলছে দখল-পাল্টা দখলের মহড়া। এরই মধ্যে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মারধর করে উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে। একচ্ছত্র দখলে নিতে প্রতিপক্ষের মুঠোফোনে দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি।
ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী ডাবলু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে খাল দখল, হত্যার হুমকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব জানান, কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ডাবলুর নেতৃত্বে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ, ছাত্রলীগ নেতা রাতুল ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি সঙ্ঘবদ্ধ দল নাছিরপুর খালের একটি মাছের ঘেরে হামলা চালায়। এ সময় তার কর্মচারী ওয়াজেদ আলী সরদারকে মারপিট করে। রিভলবার, চাইনিজ কুড়াল, রামদা ও লোহার রড নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ করে তাকে।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতা আবু তালেব পাইকগাছা থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, বিতর্কিত মৎস্যজীবী সমিতি ‘তালতলা গোয়ালবাথান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’র পৃষ্টপোষক শাহাদাত হোসেন ডাবলুর বিরুদ্ধে।
ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, গেলো ১৮ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টা ৮ মিনিটে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে শ্বশুরের মুঠোফোনে কল করে বিএনপি নেতা শেখ আবু তালেবকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মৎস্যজীবীরা।
এলাকাবাসী জানায়, গত ৫ আগস্টের পর ডাবলু, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন নিয়ে নতুন করে এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। এরপর শুরু করে চাঁদাবাজি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কপিলমুনি বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে চলছে ঘের দখল ও জলমহল দখলের মহড়া। এর মধ্যে বরাবরের মতো তার প্রধান টার্গেট নাছিরপুর খাল। এই খালটি দখলে নিয়ে চলে তার কার্যক্রম।
এরই অংশ হিসেবে, গত ১৯ অক্টোবর ও ২১ অক্টোবর ভোররাতে দু’দফায় তৎকালীন নাছিরপুর জলমহলের ইজারাদার উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের এনামুল শেখের খালের বাসায় হামলা চালায়। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন নিয়ে পুড়িয়ে দেয় বাসা। চেষ্টা করে জলমহল দখলের। এ ঘটনায় পরদিন ২২ অক্টোবর পাইকগাছা থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর-৬।
সবশেষ ২০২৪ সালে কপিলমুনি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলের নামে ইজারাকৃত নাছিরপুর খালটি জোর করে দখল করে নেয় সে।
মূলত, বিকর্কিত শাহাদাত হোসেন ডাবলুর নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলায় অংশ নেয়া এজাহারভুক্ত আসামিরা। তাদের ব্যবহার করে চলছে এ ধরনের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
এলাকাবাসীর দাবি, ৬০.২৬ একর আয়তনের নাছিরপুর খালটি জরুরিভিত্তিতে দখলমুক্ত করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়া হোক। না হলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আছে প্রাণহানির শঙ্কাও।
খুলনা গেজেট/এএজে